Auwal Masjid

বো-কাপের ইসলামি স্থাপনা

বো-কাপের ইসলামি স্থাপনা দক্ষিণ আফ্রিকায় ইসলামের ইতিহাস তুলে ধরে। ওলন্দাজ উপনিবেশিক আমলের শেষের দিকে, ১৭৯৪ সালে ড্রপ স্ট্রিটের শেষ প্রান্তে নির্মিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম মসজিদ আউয়াল মসজিদ। ‘আউয়াল’ শব্দের অর্থ প্রথম। তুয়ান গুরু (ইন্দোনেশীয় ভাষায় যার অর্থ মহান শিক্ষক) নামে পরিচিত, ইন্দোনেশিয় যুবরাজ ও ধর্মীয় নেতা আবদুল্লাহ ইবনে কাদি আল-সালাম ১২ বছর আফ্রিকার রোবেন দ্বীপে বন্দি থাকার পর মুক্তি পেয়ে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই প্রথম ইমাম নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় বিদ্যালয় (মাদ্রাসা) হিসেবেও এটি ব্যবহার করেন। ইসলামের স্বীকৃতিস্বরূপ, উপাসনার স্বাধীনতার জন্য কেপ মুসলিমদের সংগ্রামের প্রতীক হিসেবেও মসজিদটি বিবেচিত হয়।

বো-কাপের ইসলামি স্থাপনা
তুয়ান গুরুর হাতে লেখা কোরআনের পাতা। ছবি: দ্য কমন ওয়ান্ডার

রোবেন দ্বীপের কারাগারে বন্দি থাকাকালীন তুয়ান গুরু চোরাচালানি কাগজে গোপনে চার কপি মুখস্ত কোরআন রচনা করেছিলেন। মসজিদের অভ্যন্তরে সেগুলোর একটি মূল কপি সংরক্ষিত রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে, চারটি কপিতে মাত্র চারটি ভুল পাওয়া গিয়েছিল! মসজিদটি ক্রিডন ভান সিলন নামের একজন মুক্ত ক্রীতদাসের অধিকৃত ৩৪ ড্রপ স্ট্রিটের বর্তমান ভূখণ্ডে নির্মিত হয়। ইন্দোনেশীয় মুসলিম মতবাদ অনুসারে, এটি শাফিঈ মসজিদ হিসেবে পরিচিত। বো-কাপের ৯০ শতাংশ মুসলিম সুন্নি ইসলামের শাফিঈ ধারার অনুসারী।

লং স্ট্রিটে আঠারো শতকের দ্বিতীয় দশকে নির্মিত দ্বিতীয় প্রাচীন স্থাপনা পাম ট্রি মসজিদ। এর সামনের দৃষ্টিনন্দন পাম গাছের জন্যই এই নামকরণ। প্রাথমিকভাবে এটি ছিল আবাসস্থল, যা মসজিদে রূপান্তরিত হয়েছে। কিছু বইয়ে মসজিদটিকে ইয়ান ভ্যান বোগিজ গির্জা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মসজিদটির সামনে রয়েছে শতবর্ষী পাম গাছ।

আউয়াল মসজিদ থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে বুয়েটেনগ্র্যাচ স্ট্রিটে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার তৃতীয় প্রাচীনতম নুরুল ইসলাম মসজিদ। তুয়ান গুরুর ছেলে আবদুল রউফ ১৮৪৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

বো-কাপের ইসলামি স্থাপনা
রানি ভিক্টোরিয়া মসজিদ। ছবি: লেখক

ঐতিহাসিকভাবে ১৭৯০ সালে প্রস্তর খননকারীরা নিচু খিয়াপিনি স্ট্রিটে প্রথম জুমার আয়োজন করেছিল। এই ঘটনা সংরক্ষণের উদ্দেশে ১৮৫০ সালে বো-কাপের বৃহত্তম ও দক্ষিণ আফ্রিকার পঞ্চম প্রাচীনতম রানি ভিক্টোরিয়া মসজিদ নির্মিত হয়, যেটি জামে মসজিদ নামে পরিচিত।

শাফিঈ মসজিদ। ছবি: লেখক

এছাড়া রয়েছে হেলিগার লেন ও খিয়াপিনি স্ট্রিটের কোণে অবস্থিত ১৮৫৯ সালে নির্মিত প্রচীন ইমাম হাজির মসজিদ, যা এখন শাফিঈ মসজিদ নামে পরিচিতি। ড্রপ ও লং স্ট্রিটের কোণে রয়েছে ১৯৮১ সালে নির্মিত হানাফি মসজিদ।

বো-কাপের ইসলামি স্থাপনা
বুরহানোল ইসলাম। ছবি: মাঘেমি/সিসি-বাই-এসএ ৪.০

লং মার্কেট স্ট্রিটে কেপটাউনের প্রথম মিনার সংবলিত পিলগ্রিম মসজিদ ১৮৮৪ সালে নির্মাণ করা হয়। কাঠের নির্মিত মূল মিনারটি ১৯৩০-এর দশকে কংক্রিটের মাধ্যমে পুনঃপ্রতিস্থাপন করায় মূল স্থাপত্যশৈলীর রূপ বদলেছে। ১৯৪০ সালে এর নাম বদলে করা হয় বুরহানোল ইসলাম। ১৯৭০ সালে মসজিদটিকে আফ্রিকার জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঘোষণা করা হয়। অন্যান্য ইসলামি স্থাপত্যশৈলী নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে ১৮৯২ সালে ভারতীয় মুসলমানদের নির্মিত লুপ স্ট্রিটের কাওয়াতুল ইসলাম মসজিদ, ১৮৯৯ সালে ভস স্ট্রিটে নির্মিত নুরুল মোহাম্মদিয়া মসজিদ এবং ১৯৫৮ সালে নির্মিত নুরুল হুদা মসজিদ।

বো-কাপের একটি গুরুত্ববহ স্থান তানা বারু (নতুন স্থল), যা মূলত লং মার্কেট স্ট্রিটের মুখে অবস্থিত মুসলিম সমাধিস্থল। তিনটি সমাধিস্থলের ভিত্তিতে গঠিত এই সমাধি কেপ মুসলমানদের নির্মিত প্রথম সমাধিস্থল। তুয়ান গুরুর সমাধিসহ দক্ষিণ আফ্রিকার সম্মানিত মুসলিম বাসিন্দার কয়েকজনের সমাধি রয়েছে এতে। ১৯৮৩ সালের জনস্বাস্থ্য আইন প্রয়োগের ফলে ১৮৮৬ সালের ১৫ জানুয়ারি সমাধিস্থলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এই আইনের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের স্বাধীনতা হ্রাস পায়। দুই দিন পর আব্দুল বার্নসের নেতৃত্বে তিন হাজার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মিছিল তানা বারুর কাছে গিয়ে আমালদিয়ান রোহ নামক এক ব্যক্তির সন্তানকে এখানে সমাধিস্থ করার মধ্য দিয়ে এই আইনের প্রতিবাদ জানানো হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে বো-কাপের ইসলামি স্থাপনা স্থান করে আছে।

Loading

Scroll to Top